মধুখালী প্রতিনিধি ঃ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কোড়কদি ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের নিরিহ কৃষক সিদ্দিক মোল্যাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় বৃদ্ধ সিদ্দিক মোল্যার কাটাখালী নিজ বাড়িতেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল সন্ত্রাসী।
নিহত সিদ্দিক মোল্যার পরিবারের দাবী বাগাট বাজারের সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন খান লাল, তার চাচা বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান ৫০/৬০ জন দেশী অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী এনে তাদের বাড়িতে এসে হামলা করে। এসময় নিহত সিদ্দিক মোল্যার ছেলে কামরুল ও হানিফ মোল্যা এবং ভাতিজা মনিরুলকে রামদা দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে থাকে, বৃদ্ধ সিদ্দিক মোল্যা তাদের কাছে হাতজোড় করে ছেলেদের প্রাণ ভিক্ষা চায়। এসময় লাল খান তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সিদ্দিক মোল্যার বুকে কোপ দেয়, এরপর তারা ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। গুরুতর অবস্থায় সিদ্দিক মোল্যাসহ অন্যান্যদের মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার সিদ্দিক মোল্যাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার পর পর সরজমিন পরিদর্শনে গেলে নিহত সিদ্দিক মোল্যার স্ত্রী শাহানাজ বেগম বলেন- বাগাটের লাল খান ও তার চাচা মতিয়ার খান লোকজন এনে আমার ছেলেদের আহত করে ও স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুনিদের ফঁাসি চাই। মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসারত নিহতের ছেলে মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন- লাল খান, মতিয়ার খান, আহম্মদ শেখসহ অনেক সন্ত্রাসী লোকজন আমাদের উপর হামলা করে আমার বাবাকে হত্যা করেছে এবং আমাদেরকেও প্রাণে মারতে চেয়েছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা বেচে আছি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোড়কদি ইউনিয়নে উত্তেজনা বিরাজ করছে, ঘটনার দিন সন্ধায় লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিহতের স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে আসে।
শুক্রবার সকাল ১০ টায় বাগাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে মরহুমের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, এর আগে এলাকার কয়েক হাজার নারী-পুরুষ বাগাট বাজার এরিয়ায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে খুনি লাল খান, মতিয়ার খান, আহম্মদ শেখসহ সকল খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবীতে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা মধুখালী থানার ওসি আমিনুল ইসলামকে লাঞ্চিত করে খুনিদের ফঁাসি ও গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। ওসি বিক্ষোভকারীদের উপর চড়াও হলে তারা ওসির প্রত্যাহারের দাবী করে শ্লোগান দিতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে ওসি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকে, বিক্ষোভ শেষে নিহত সিদ্দিক মোল্যার জানাজার পর বাগাট কেন্দ্রীয় গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজা অনুষ্ঠানে মধুখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রেজাউল হক বকু, ভাইস চেয়ারম্যান মুরাদুজ্নজামান মুরাদ, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক আতিয়ার রহমান মিয়া উপস্থিত ছিলেন। ঐ দিন রাতে নিহত সিদ্দিক মোল্যার ছেলে মোঃ কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে শাহাদৎ হোসেন লাল খান ও তার চাচা বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান খানকে প্রধান আসামী করে ৬০ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ ব্যাপারে দৈনিক ইত্তেফাকের মধুখালী প্রতিনিধি মোঃ শাহ ফারুক ওসি মধুখালীর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন- বাগাট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মতিয়ার রহমান খানসহ ৬০ জনের নামে নিহতের ছেলে কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত মধুখালীর ওসি আমিনুল ইসলাম মামলা নিতে গড়িমসি করছে এমন প্রশ্নে একাধিক সংবাদকর্মী ওসি- মধুখালীর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন- কথাটি সত্য নয়, অভিযোগ পেয়েছি, অবশ্যই মামলা নিব। শনিবার বিকালে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওসি বাদীর স্বজনদের কাছে অভিযোগ গ্রহনের কোন নকল কপি প্রদান করেন নি। এ বিষয়ে ওসির কাছে প্রশ্ন করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান কিছু অফিসিয়াল প্রক্রিয়া আছে সেগুলো শেষ করে আজ রাত ৯ টায় মামলার নকল বাদীর স্বজনদের কাছে দেওয়া হবে। এদিকে এই হত্যা মামলায় বাগাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে আসামী করায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দেব প্রসাদ রায় শনিবার সন্ধায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ আহবান করেছে। ওসির স্বীকার উক্তি অনুযায়ী মতিয়ার রহমান খান সিদ্দিক মোল্যা হত্যা মামলার অন্যাতম ৪নং হুকুমের আসামী। সন্ধা ৬ টায় মতিয়ার রহমান খানকে প্রকাশ্যে লোকজনসহ বাগাট বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখায় মধুখালী থানার ওসির দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছেন বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক একজন বলেন- প্রকাশ্যে দিবালোকে একজন তরতাজা লোককে তার বাড়িতে গিয়ে হত্যা করা হোল এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে কুপিয়ে জখম করল, সেই মামলার আসামী প্রকাশ্যে সমাবেশ করছে, এমন ঘটনায় তিনি ওসি মধুখালীকে ধিক্কার জানান। অন্যদিকে হত্যা কান্ডের ৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় মধুখালী থানা প্রশাসনের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। নিহত সিদ্দিক মোল্যার স্বজনেরা সাংবাদিকদের বলেন- ঘটনার ৩ দিন পরও মধুখালী থানা পুলিশ একজন আসামীকেও ধরতে পারেনি, যতদুর জেনেছি মধুখালী পুলিশ খুনি লাল বাহিনী ও আহম্মদ বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, উল্টে আমাদের লোকজনের উপর হুমকি ধমকি দিচ্ছে। বিষয়টি অস্বীকার করে মধুখালী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন- একটি হত্যা মামলা হয়েছে, মামলা নং ০৪, তারিখ ০৪/০৭/২০২০, নকল দেওয়ার বিষয়ে বলেন- আজ রাত ৯ টায় আমি তাদের স্বজনদেরকে থানায় এসে নকল নিয়ে যেতে বলেছি।
Leave a Reply