স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে কী হবে সরকারের কর্মপরিকল্পনা
দেবাশীষ রায়
৭ জানুয়ারি ২০২৪, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। মানুষ আস্থা রেখেছে শেখ হাসিনার প্রতি, আস্থা রেখেছে আওয়ামী লীগের প্রতি। কারণ আওয়ামী লীগ দেশের জন্য কাজ করেছে, জনগণের জন্য কাজ করেছে।
একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের সার্বিক উন্নয়ন তথা দারিদ্র বিমোচনের মূল চাবিকাঠি তথ্য ও প্রযুক্তি। বর্তমান সময়ে জাতিগত উন্নয়নের মানদণ্ড তার প্রযুক্তিগত উন্নয়ন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন রাঙ্গামাটি জেলার বেতবুনিয়া দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচন ইশতেহার “দিন বদলের সনদ” এ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের একান্ত প্রচেষ্টায় বিগত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। বাংলাদেশের মানুষ এখন বিশ্বাস করে যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের জীবনযাত্রার মান বদলে দিয়েছে। দেশে এখন স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষা কার্যক্রম প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের তথ্য ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাত থেকে আট হাজারের মতো। দেশের প্রতিটি জেলায় ইন্টারনেট পৌঁছে গিয়েছে, দেশে বর্তমান প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০১৮ সালে উৎক্ষেপিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ক্ষমতা অর্জন করেছে।
তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার প্রয়োজন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৭ টি যার সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪,৯৪২ মেগাওয়াট, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫১ টি যার উৎপাদন ক্ষমতা ২৯,১৫২ মেগাওয়াট ( ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহ)।
বিগত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪,২১০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৭% হতে প্রায় ১০০% পৌঁছে গিয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তুলেছে।
বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে বহির্বিশ্বে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় করোনার মত অতিমারি সময়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ অবস্থানে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা গিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৮ সালের নির্বাচন ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তা এখন দৃশ্যমান। তিনি যদি এই রূপকল্প বাস্তবায়ন না করতেন, করোনা বিপর্যয়ের সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হতো, মৃত্যুবরণ করতো আরও অনেক মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালে ১২ই ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সর্বপ্রথম স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হতে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ যেখানে সব ধরনের নাগরিক সেবা থেকে শুরু করে সবকিছু স্মার্টলি করা হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিক কোনরকম ভোগান্তি ছাড়া সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চারটি নির্দিষ্ট ভিত্তিকে চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো—১) স্মার্ট নাগরিক; ২) স্মার্ট অর্থনীতি; ৩) স্মার্ট সরকার ও ৪) স্মার্ট সমাজ।
নাগরিকগণ যখন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে সক্ষম হন, প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের সকল তথ্য আদান প্রদান করতে পারেন তখন তাদেরকে স্মার্ট নাগরিক বলা হয়। স্মার্ট নাগরিকগণ ঘরে বসে বিশ্বের সকল তথ্য সম্পর্কে জানতে পারেন।
স্মার্ট নাগরিকগণ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিতে উন্নয়ন সাধন থেকে শুরু করে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলা পর্যন্ত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন, যেমন প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি জমি সীমানা নির্ধারণ ফসলের রোগ বালাই পোকামাকড় দমন উৎপাদিত ফসল সঠিক মূল্যে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব।
স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিককে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও নাগরিকের মধ্যে সমতা তৈরি করে সকলের জন্য তথ্য ও পরিষেবার দক্ষ ও সহজবোধ্য নিয়ম চালু করতে হবে। গ্রাম পর্যায়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির সকল সুযোগ সুবিধা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা এবং এর ব্যবহার আরও সহজলভ্য করতে হবে ।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে সনাতনী ব্যবস্থার আধুনিকায়ন বা রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনীতি গতিশীল করা তথা স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে অর্থনীতি সকল ব্যবহার হবে প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে, ক্যাশলেস ট্রানজেকশন বা টাকা বিহীন লেনদেন স্মার্ট অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
স্মার্ট অর্থনীতি বাস্তবায়নের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI), ইন্টারনেট অফ থিংস, রোবোটিক্স, বিগ ডাটা, শিক্ষা কার্যক্রমে জোরদান করতে হবে। নাগরিকের নিকট জবাবদিহিতা প্রদান করা, স্বচ্ছ শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা স্মার্ট সরকারের প্রধান উপাদান। এই ভিত্তির আওতায় দেশের সকল সরকারি পরিষেবা অনলাইন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
এ লক্ষ্যে একটি সহজলভ্য গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে যেখানে সকল অংশীজনের পরিষেবার গুণগত মান বজায় থাকবে। যে সমাজের প্রতিটি উপাদান যেমন খাদ্য চিকিৎসা শিক্ষা সব প্রযুক্তি নির্ভর তাকে স্মার্ট সমাজ বলে। স্মার্ট সমাজের প্রতিটি নাগরিক দৈনন্দিন সকল কার্যক্রম প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে সম্পন্ন করে।
দেবাশীষ রায়
প্রভাষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
Leave a Reply